বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭

কিভাবে স্মাট হব?

সবাই চায় একটু স্মার্ট হতে,সবার সামনে নিজেকে সুন্দর করে তুলতে। এর জন্য অনেকে অনেক কিছু করি,কেউ হতে পারি আবার কেউ পারিনা। আসলে স্মার্ট হওয়া এটা আল্লাহ তায়ালার দান, তারপরেও আমরা যদি সঠিক নিয়মে চেষ্টা করি তাহলে আমরাও স্মার্ট হতে পারব।স্মার্ট হওয়ার কয়েকটি ধরন আছে যেমন কেউ দেখতে সুন্দর, লম্বা,হাটাচলা সুন্দর সে স্মাট এমনি ভাবে যে মানুষ টা ভদ্র,সভ্য,কথা বার্তা সুন্দর সেও স্মার্ট,এবং প্রকৃত স্মাট। আমাদের প্রকৃত স্মার্ট হওয়া আবশ্যক। তারপরে বাহ্যিক টা।তো কিভাবে স্মার্ট হব সেই কথায় আসি, স্মার্ট হতে হলে সুন্দর হতে হয়,লম্বা হতে হয়, তো এগুলো হওয়ার জন্য আবশ্যক নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করা ঘুমানো সকল বদ অভ্যাস ত্যাগ করা। প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া যেমন গরুর গোস্ত,দুধ, ডিম ইত্যাদি। এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা। সবাই ভালো থাকবেন।  আল্লাহ হাফেজ


সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭

প্রেমের কবিতা

অনেক ছিল বলার কাজি নজরুল ইসলাম অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে। পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আসতে। আজকে মহাসাগর-স্রোতে চলেছি দূর পারের পথে ঝরা পাতা হারায় যথা সেই আঁধারে ভাসতে। গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজকে। কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে। আসতে যদি হে অতিথি ছিল যখন শুকা তিথি ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে। ============================================ ২ অনামিকা কাজী নজরুল ইসলাম কোন নামে ডাকব তোমায় নাম-না-জানা- অনামিকা জলে স্থলে গগনে-তলে তোমার মধুর না যে লিখা। গীষ্মে কনক-চাঁপার ফুলে তোমার নামের আভাস দুলে ছড়িয়ে আছে বকুল মূলে তোমার নাম হে নিকা। বর্ষা বলে অশ্রুজলের মানিনী সে বিরহিনী। আকাশ বলে, তরিতে লতা, ধরিত্রী কয় চাতকিনী। আষাঢ় মেঘে রাখলো ঢাকি নাম যে তোমার কাজল আঁখি শ্রাবণ বলে, যুঁই বেলা কি? কেকা বলে মালবিকা। শারদ-প্রাতে কমল বনে তোমার নামে মধু পিয়ে বানীদেবীর বীণার সুরে ভ্রমর বেড়ায় গুনগুনিয়ে! তোমার নামের মিল মিলিয়ে ঝিল ওঠে গো ঝিলমিলিয়ে আশ্বিণ কয়, তার যে বিয়ে গায়ে হলুদ শেফালিকা। নদীর তীরে বেনুর সুরে তোমার নামের মায়া ঘনায়, করুণা আকাশ গ'লে তোমার নাম ঝরে নীহার কণায় আমন ধানের মঞ্জরীতে নাম গাঁথা যে ছন্দ গীতে হৈমন্তী ঝিম্ নিশীতে তারায় জ্বলে নামের শিখা। ছায়া পথের কহেলিকায় তোমার নামের রেণু মাখা, ম্লান মাধুরী ইন্দুলেখায় তোমার নামের তিলক আঁকা। মোর নামে হয়ে উদাস ধুমল হোলো বিমল আকাশ কাঁদে শীতের হিমেল বাতাস কোথায় সুদূর নীহারিকা। তোমার নামের শত-নোরী বনভূমির গলায় দোলে জপ শুনেছি তোমার নামের মুহহুমুর্হু বোলে। দুলালচাঁপার পাতার কোলে তোমার নামের মুকুল দোলে কুষ্ণচুড়া, হেনা বলে চির চেনা সে রাধিকা। বিশ্ব রমা সৃষ্টি জুড়ে তোমার নামের আরাধনা জড়িয়ে তোমার নামাবলী-হৃদয় করে যোগসাধনা। তোমার নামের আবেগ নিয়া সিন্ধু উঠে হিল্লোলিয়া সমীরনে মর্মরিয়া ফেরে তোমার নাম -গীতিকা। ============================================ ৩ অভিশাপ কাজী নজরুল ইসলাম যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে - বুঝবে সেদিন বুঝবে! ছবি আমার বুকে বেঁধে পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে ফিরবে মরু কানন গিরি, সাগর আকাশ বাতাস চিরি' যেদিন আমায় খুঁজবে - বুঝবে সেদিন বুঝবে! স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে, কাহার যেন চেনা-ছোওয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে, - জাগবে হঠাৎ চমকে! ভাববে বুঝি আমিই এসে ব'সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে, ধরতে গিয়ে দেখবে যখন শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন! বেদনাতে চোখ বুজবে - বুঝবে সেদিন বুঝবে! গাইতে ব'সে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না, ব'লবে সবাই - "সেই যে পথিক, তার শেখানো গান না?" আসবে ভেঙে কান্না! প'ড়বে মনে আমার সোহাগ, কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ! প'ড়বে মনে অনেক ফাঁকি অশ্রু-হারা কঠিন আঁখি ঘন ঘন মুছবে - বুঝবে সেদিন বুঝবে! আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ'রবে তোমার অঙ্গন, তুলতে সে-ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ - কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন! শিউলি ঢাকা মোর সমাধি প'ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি'! বুকের মালা ক'রবে জ্বালা চোখের জলে সেদিন বালা মুখের হাসি ঘুচবে - বুঝবে সেদিন বুঝবে! ============================================ ৪ নিঃসঙ্গতা আবুল হাসান অতোটুকু চায় নি বালিকা! অতো শোভা, অতো স্বাধীনতা! চেয়েছিলো আরো কিছু কম, আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিলো মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক! অতোটুকু চায় নি বালিকা! অতো হৈ রৈ লোক, অতো ভিড়, অতো সমাগম! চেয়েছিলো আরো কিছু কম! একটি জলের খনি তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিলো একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী ============================================ ৫ প্রেমিকের প্রতিদন্দ্বী আবুল হাসান ‘অতবড় চোখ নিয়ে, অতবড় খোঁপা নিয়ে অতবড় দীর্ঘশ্বাস বুকের নিশ্বাস নিয়ে যত তুমি খুলে দাও কোমরের কোমল সারস যত তুমি খুলে দাও ঘরের পাহারা যত আনো ও- আঙুলে অবৈধ ইশারা যত না জাগাও তুমি ফুলের সুরভি আঁচলে আলগা করো কোমলতা, অন্ধকার মাটি থেকে মৌনতার ময়ুর নাচাও কোনো আমি ফিরবো না আর, আমি কোনো দিন কারো প্রেমিক হবে না; প্রেমিকের প্রতিদ্ধন্দ্বি চাই আজ আমি সব প্রেমিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হবো। ============================================ ৬ আকাঙ্খা আবুল হাসান তুমি কি আমার আকাশ হবে? মেঘ হয়ে যাকে সাজাব আমার মনের মত করে । তুমি কি আমার নদী হবে? যার নিবিড় আলিঙ্গনে ধন্য হয়ে তরী বেশে ভেসে যাব কোন অজানা গন্তব্যের পথে । তুমি কি আমার জোছনা হবে? যার মায়াজালে বিভোর হয়ে নিজেকে সঁপে দেব সকল বাস্তবতা ভুলে । তুমি কি আমার কবর হবে? যেখানে শান্তির শীতল বাতাসে বয়ে যাবে আমার চিরনিদ্রার অফুরন্ত প্রহর । ============================================ ৭ প্রশ্ন আবুল হাসান চোখ ভরে যে দেখতে চাও রঞ্জন রশ্মিটা চেনো তো? বুক ভরে যে শ্বাস নিতে চাও জানো তো অক্সিজেনের পরিমাণটা কত? এত যে কাছে আসতে চাও কতটুকু সংযম আছে তোমার? এত যে ভালোবাসতে চাও তার কতটুকু উত্তাপ সইতে পারবে তুমি? ============================================ ৮ দোতলার ল্যন্ডিং মুখোমুখি ফ্ল্যাট। একজন সিঁড়িতে, একজন দরোজায় আহসান হাবীব : আপনারা যাচ্ছেন বুঝি? : চ’লে যাচ্ছি, মালপত্র উঠে গেছে সব। : বছর দু’য়েক হ’লো, তাই নয়? : তারো বেশি। আপনার ডাকনাম শানু, ভালো নাম? : শাহানা, আপনার? : মাবু। : জানি। : মাহবুব হোসেন। আপনি খুব ভালো সেলাই জানেন। : কে বলেছে। আপনার তো অনার্স ফাইনাল, তাই নয়? : এবার ফাইনাল : ফিজিক্স-এ অনার্স। : কি আশ্বর্য। আপনি কেন ছাড়লেন হঠাৎ? : মা চান না। মানে ছেলেদের সঙ্গে ব’সে… : সে যাক গে, পা সেরেছে? : কি ক’রে জানলেন? : এই আর কি। সেরে গেছে? : ও কিছু না, প্যাসেজটা পিছল ছিলো মানে… : সত্যি নয়। উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে… : ধ্যাৎ। খাবার টেবিলে রোজ মাকে অতো জ্বালানো কি ভালো? : মা বলেছে? : শুনতে পাই? বছর দুয়েক হ’লো, তাই নয়? : তারো বেশি। আপনার টবের গাছে ফুল এসেছে? : নেবেন? না থাক। রিকসা এলো, মা এলেন, যাই। : যাই। আপনি সন্ধেবেলা ওভাবে পড়বেন না, চোখ যাবে, যাই। : হলুদ শার্টের মাঝখানে বোতাম নেই, লাগিয়ে নেবেন, যাই। : যান, আপনার মা আসছেন। মা ডাকছেন, যাই। ============================================ ৯ প্রেম হুমায়ুন আজাদ আমরা বিশ্বাস করি না আমাদের? করি? হয়তো করি না? তুমি ভাবো আমি আজ হয়তোবা আছি কোনো ঝলমলে অষ্টাদশী তরুণীর সাথে; মেতে আছি ঠোঁটে, বুকে,শিহরণে; রোববার যাবো অন্য কোনো তরুণীতে। আর আমি ভাবি অদ্বিতীয় তোমর শরীর হয়তো পিষ্ট হচ্ছে কোনো শক্তিমান সুদর্শন দেবতার দ্বারা; তোমার কন্ঠের স্বরে কে না কাপেঁ কয়েক সপ্তাহ? প্রথম তোমাকে দেখেই কে না পড়ে থরোথরো প্রেমে? তোমাকে হয়তো তারা পাঁচতারা, অথবা প্রাচীন ক্যাসেলে বাহুতে ও বুকে ক'রে রাখ। হয়তো পাহাড়ে গেছো কারো সঙ্গে,-ভাবি-, উদ্যানপার্টিতে কাটছে সন্ধ্যা; শেষে আলিঙ্গনে বেঁধে, বুকে ক'রে, কেউ নেবে ঘরে; হয়তো ভাবছো তুমি নভেম্বরের এই মনোরম কুয়াশায় শীতে কারো সঙ্গে আমি মত্ত মানবিক সবচেয়ে সুখকর জ্বরে। আমাকে সন্দেহ ক'রে কষ্ট পাও? নিরন্তর? যে-রকম আমি তোমাকে সন্দেহ ক'রে কাঁপি? দু:স্বপ্নে ঘুমহীন থাকি? আমরা বিশ্বাস করি না আমাদের? অবিশ্বাসে দিবা আর যামি সন্দেহকেই প্রেমে পরিণত ক'রে বুক ভ'রে রাখি? ============================================ ১০ রান্নাঘরে নারীবাদী হুমায়ুন আজাদ তুমি এসেছিলে লিসবন আর আমি দূর ঢাকা থেকে; দেখা হয়েছিলো গ্রান্টস হাউজের উষ্ণ রান্নাঘরে; রাঁধছিলে তুমি পোর্ক ও পোটটো; আমার শুঁটকি রান্না দেখে চেয়ে রয়েছিলে দুই নীল চোখ বিষ্ময়ে পুরো ভ'রে। 'হাই', হেসে বলেছিলে,'কোথা থেকে যেনো তুমি?' 'বাঙলাদেশ; আর 'তুমি?'-বলেছিলে, 'আমি পর্তুগাল।' -'বাঙলাদেশ?' চিনতে পারো নি;-সাগর না মরুভূমি; লজ্জা তোমার গন্ডদেশকে ক'রে তুলেছিলো আরো লাল। তারপর আমরা অনেক রেঁধেছি;বুঝেছি রান্নায়ও আছে সুখ। তুমি খুব সুখে খেয়েছো শুঁটকি, ভর্তা, বিরিয়ানি, মাছ, ভাত, আমিও খেয়েছি পোর্ক ও পোটেটো; স্বাদে ভ'রে গেছে মুখ; কথা ব'লে ব'লে বুঝতে পারি নি গভীর হয়েছে রাত। ''নারীবাদী আমি', বলেছিলে. 'খুবই ঘৃণা করি প্রেম আর বিয়ে, প্রেম বাজে কথা; বিয়ে? ওহ গশ! খুবই নোংরা কাজ।' 'প্রেম বেশ লাগে', বলেছি আস্তে, 'কখনো বিবাহ নিয়ে ভাবি নি যদিও; মনে হয় বিবাহের কোনো দরকার নেই আজ।' চুমো খেতে খেতে ঘুমিয়েছি আমরা; বহু রাত গেছে সুখে, আমাদের দেহে বেজেছে অর্গ্যান, ব্যাগপাইপ রাশিরাশি; একরাতে দেখি কী যেনো জমেছে তোমার সুনীল চোখে, আধোঘুমে ব'লে উঠেছিলে, 'প্রিয়, তোমাকে যে ভালোবাসি।' কেঁপে উঠেছিলো বুক সেই রাতে; বেশি নয়, আট মাস পরে বলেছিলে, 'চলো বিয়ে করি, আমার এখন বিয়ের ইচ্ছে ভারি।' চুমো থেকে আমি পিছলে পড়েছি, ফিরেছি নিজের ঘরে; 'চলো বিয়ে করি, চলো বিয়ে করি', প্রতিটি চুমোর পরে; এভাবেই , প্রিয়, একদিন হলো আমাদের চিরকাল ছাড়াছাড়ি। ============================================ ১১ আত্মহত্যার অস্ত্রাবলি হুমায়ুন আজাদ স্লিপিং টেবলেট খেয়ে অনায়াসে ম’রে যেতে পারি বক্ষে ঢোকানো যায় ঝকঝকে উজ্জ্বল তরবারি কপাল লক্ষ্য ক’রে টানা যায় অব্যর্থ ট্রিগার ছুঁয়ে ফেলা যায় প্রাণবাণ বৈদ্যুতিক তার ছাদ থেকে লাফ দেয়া যায় ধরা যায় ভোরবেলাকার রেলগাড়ি অজস্র অস্ত্র আছে যে-কোনো একটি দিয়ে আত্মহত্যা ক’রে যেতে পারি এবং রয়েছো তুমি সবচেয়ে বিষাক্ত অস্ত্র প্রিয়তমা মৃত্যুর ভগিনী তোমাকে ছুঁলে দেখলে এমনকি তোমার নাম শুনলে আমার ভেতরে লক্ষ লক্ষ আমি আত্মহত্যা করি। ============================================ ১২ তুমি এল কই কাজী নজরুল্ ইসলাম গাঙে জোয়ার এল ফিরে তুমি এলে কই খিড়কি দুয়ার খুলে পথ-পানে চেয়ে রই।। কালোজামের ডালের ফাঁকে আমায় দেখে কোকিল ডাকে আজও কেন যায় না দেখা তোমার নায়ের ছই। চুল বেঁধে আজ সেজেগুজে পিদিম জ্বালাই সাঁঝে ঠাকুরঝিরা মুচকি হাসে, আমি মরি লাজে বাদলা রাতে বৃষ্টি ঝরে মন যে আমার কেমন করে আমার চোখের জলে বন্ধু মাঠ করে থই-থই।। ============================================ ১৩ চিঠি দিও মহাদেব সাহা করুণা করেও হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও আঙুলের মিহিন সেলাই ভুল বানানেও লিখি প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও, এটুকু সামান্য দাবি চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো অক্ষরের পাড় বোনা একখানি চিঠি চুলের মতন কোন চিহ্ন দিও বিষ্ময় বোঝাতে যদি চাও। সমুদ্র বোঝাতে চাও, মেঘ চাও, ফুল পাখি, সবুজ পাহাড় বর্ণনা আলস্য লাগে তোমার চোখের মতো চিহ্ন কিছু দাও। আজোতো অমল আমি চিঠি চাই, পথ চেয়ে আছি আসবেন অচেনা রাজার লোক তার হাতে চিঠি দিও, বাড়ি পৌছে দেবে। এক কোনে শীতের শিশির দিও এক ফোঁটা, সেন্টের শিশির চেয়ে তৃনমূল থেকে তোলা ঘ্রাণ এমন ব্যস্ততা যদি শুদ্ধ করে একটি শব্দই শুধু লিখো, তোমার কুশল! ওইতো রাজার লোক যায় ক্যাম্বিসের জুতো পায়ে, কাঁধে ব্যাগ, হাতে কাগজের একগুচ্ছ সীজন ফ্লাওয়ার কারো কৃষ্ণচূড়া, কারো উদাসীন উইলোর ঝোঁপ, কারো নিবিড় বকুল এর কিছুই আমার নয় আমি অকারণ হাওয়ায় চিৎকার তুলে বলি, আমার কি কোনো কিছু নেই? করুনা করেও হলে চিঠি দিও, ভুলে গিয়ে ভুল করে একখানি চিঠি দিও খামে কিছুই লেখার নেই তুব লিখো একটি পাখির শিস একটি ফুলের ছোটো নাম, টুকিটাকি হয়তো হারিয়ে গেছে কিছু হয়তো পাওনি খুঁজে সেইসব চুপচাপ কোনো দুপুরবেলার গল্প খুব মেঘ করে এলে কখনো কখনো বড়ো একা লাগে, তাই লিখো করুণা করেও হলে চিঠি দিও, মিথ্যা করেও হলে বলো, ভালোবাসি। ============================================ ১৪ উত্তর শামসুর রাহমান তুমি হে সুন্দরীতমা নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতেই পারো ‘এই আকাশ আমার’ কিন্তু নীল আকাশ কোনো উত্তর দেবেনা। সন্ধ্যেবেলা ক্যামেলিয়া হাতে নিয়ে বলতেই পারো, ‘ফুল তুই আমার’ তবু ফুল থাকবে নীরব নিজের সৌরভে আচ্ছন্ন হয়ে। জ্যোত্স্না লুটিয়ে পড়লে তোমার ঘরে, তোমার বলার অধিকার আছে, ‘এ জ্যোত্স্না আমার’ কিন্তু চাঁদিনী থাকবে নিরুত্তর। মানুষ আমি, আমার চোখে চোখ রেখে যদি বলো, ‘তুমি একান্ত আমার’, কী করে থাকবো নির্বাক ? তারায় তারায় রটিয়ে দেবো, ‘আমি তোমার, তুমি আমার’। ============================================ ১৫ যাত্রাভঙ্গ নির্মলেন্দু গুন হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই, দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই। হেমের মাঝে শুই না যবে, প্রেমের মাঝে শুই তুই কেমন কর যাবি? পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া আমাকেই তুই পাবি। তবুও তুই বলিস যদি যাই, দেখবি তোর সমুখে পথ নাই। তখন আমি একটু ছোঁব হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর বিদায় দুটি পায়ে, তুই উঠবি আমার নায়ে, আমার বৈতরণী নায়ে। নায়ের মাঝে বসবো বটে, না-এর মাঝে শোবো, হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ দুঃখ দিয়ে ছোঁব। ============================================ ১৬ অনন্ত প্রেম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শত বার, জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার। চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার- কত রূপ ধ'রে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার। যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা, অতিপুরাতন বিরহমিলন-কথা, অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে দেখা দেয় অবশেষে কালের তিমির রজনী ভেদিয়া তোমারি মুরতি এসে চিরস্মৃতিময়ী ধ্রবতারকার বেশে। আমরা দু’জনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে অনাদিকালের হৃদয় উৎস হতে। আমরা দু’জনে করিয়া খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে বিরহবিধূর নয়নসলিলে মিলনমধুর লাজে। পুরাতন প্রেম নিত্যনতুন সাজে। আজি সেই চিরদিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে। নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিলপ্রানের প্রীতি একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে- সকল প্রেমের স্মৃতি, সকল কালের সকল কবির গীতি। ============================================ ১৭ ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত তসলিমা নাসরীন ভূল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু এখনো কেমন যেন হৃদয় টাটায়- প্রতারক পুরুষেরা এখনো আঙুল ছুঁলে পাথর শরীর বেয়ে ঝরনায় জল ঝরে। এখন কেমন যেন কল কল শব্দ শুনি। নির্জন বৈশাখ, মাঘ-চৈত্রে- ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত, তবু বিশ্বাসের রোদে পুড়ে নিজেকে অঙ্গার করি। প্রতারক পুরুষেরা এবার ডাকালেই ভুলে যাই পেছনের সজল ভৈরবী ভুলে যাই মেঘলা আকাশ, না ফুরানো দীর্ঘ রাত। একবার ডাকলেই সব ভুলে পা বাড়াই নতুন ভুলের দিকে। একবার ভালোবাসলেই সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা। ভুলে প্রেমে তিরিশ বছর গেল সহস্র বছর যাবে আরো, তবু বোধ হবে না নির্বোধ বালিকার। ============================================ ১৮ স্বীকার উক্তি মুসলেহ উদ্দীন কতখানি ভালবাসি প্রশ্ন করেছিলে সন্দিহান চোখে দুটি দ্বিধাহীন মেলে ভালোবেসে যদি হয় মৃত্যু পরিণাম জেনে রেখো তবু আমি ভালোবেসেছিলাম। ============================================ ১৯ ঋণ চৌধুরী কামরূল আহসান হে নারী, তোমার কাছে বিশেষ প্রার্থনা আমার এক রাত থোকে তুমি আমার কাছে পালঙ্কে শুয়ে আমার পাশাপাশি, দেহের সমস্ত উষ্ণতা ঢেলে দিও আমার শরীরে, আড়াল করো আমাকে তোমার লজ্জা দিয়ে, জানি, কোন নারী জীবনে রয়না চিরদিন, এক জীবনে শুধতে হবে বহু নারীর ঋণ। ============================================ ২০ মৃত্যুকে চুপি চুপি চৌধুরী কামরুল আহসান মৃত্যু তুমি নারী হলে পরে চুপি চুপি কাছে এসো, হৃদয় যদি উপড়াতে চাও তার আগে ভালোবেসো। প্রয়োজন নেই কিছু ভালোবাসার, ভালোবাসা, তোমায় দিলেম আজকে ছুটি সুখের রাজ্যে প্রেম বিষাদময় জুলিয়েন্ট-হেলেনও যেন চুনো আর পুটি। Good- Bye, ভালোবাসা। ============================================ ২১ কথোপকথন --৪ পুর্ণেন্দু পত্রী - যে কোন একটা ফুলের নাম বল - দুঃখ । - যে কোন একটা নদীর নাম বল - বেদনা । - যে কোন একটা গাছের নাম বল - দীর্ঘশ্বাস । - যে কোন একটা নক্ষত্রের নাম বল - অশ্রু । - এবার আমি তোমার ভবিষ্যত বলে দিতে পারি । - বলো । - খুব সুখী হবে জীবনে । শ্বেত পাথরে পা । সোনার পালঙ্কে গা । এগুতে সাতমহল পিছোতে সাতমহল । ঝর্ণার জলে স্নান ফোয়ারার জলে কুলকুচি । তুমি বলবে, সাজবো । বাগানে মালিণীরা গাঁথবে মালা ঘরে দাসিরা বাটবে চন্দন । তুমি বলবে, ঘুমবো । অমনি গাছে গাছে পাখোয়াজ তানপুরা, অমনি জোৎস্নার ভিতরে এক লক্ষ নর্তকী । সুখের নাগর দোলায় এইভাবে অনেকদিন । তারপর বুকের ডান পাঁজরে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে রক্তের রাঙ্গা মাটির পথে সুড়ঙ্গ কেটে কেটে একটা সাপ পায়ে বালুচরীর নকশা নদীর বুকে ঝুঁকে-পড়া লাল গোধূলি তার চোখ বিয়েবাড়ির ব্যাকুল নহবত তার হাসি, দাঁতে মুক্তোর দানার মত বিষ, পাকে পাকে জড়িয়ে ধরবে তোমাকে যেন বটের শিকড় মাটিকে ভেদ করে যার আলিঙ্গন । ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত হাসির রং হলুদ ধীরে ধীরে তোমার সমস্ত গয়নায় শ্যাওলা ধীরে ধীরে তোমার মখমল বিছানা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে সাদা । - সেই সাপটা বুঝি তুমি ? - না । - তবে ? - স্মৃতি । বাসর ঘরে ঢুকার সময় যাকে ফেলে এসেছিলে পোড়া ধুপের পাশে । ============================================ ২২ সে জীবনানন্দ দাস আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে; বলেছিলোঃ 'এ নদীর জল তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল; সব ক্লান্তি রক্তের থেকে স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি; এই নদী তুমি।' 'এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?' মাছরাঙাদের বললাম; গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম। আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি; জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে। সময়ের অবিরল শাদা আর কালো বনানীর বুক থেকে এসে মাছ আর মন আর মাছরাঙাদের ভালোবেসে ঢের আগে নারী এক - তবু চোখ ঝলসানো আলো ভালোবেসে ষোলো আনা নাগরিক যদি না হয়ে বরং হতো ধানসিঁড়ি নদী। ============================================ ২৩ আকাশলীনা জীবনানন্দ দাশ সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা : নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে; ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার; দূর থেকে দূরে - আরও দূরে যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর। কী কথা তাহার সাথে? - তার সাথে! আকাশের আড়ালে আকাশে মৃত্তিকার মতো তুমি আজ : তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে। সুরঞ্জনা, তোমার হৃদয় আজ ঘাস : বাতাসের ওপারে বাতাস - আকাশের ওপারে আকাশ। ============================================ ২৪ ভালো আছি ভালো থেকো রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে। ঢেকে রাখে যেমন কুসুম পাপড়ির আবডালে ফসলে ঘুম তেম্নি তোমার নিবিড় চলা মরমের মুল পথ ধরে। পুষে রাখে যেমন ঝিনুক খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ তেম্নি তোমার গভীর ছোঁয়া ভিতরের নীল বন্দরে। ভালো আছি, ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো দিও তোমার মালাখানি বাউল এ মনটারে। ============================================ ২৫ কেউ কথা রাখেনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুনা বলেছিল, যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে। ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড় বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম তবু কথা রাখেনি বরুনা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ এখনো সে যে কোনো নারী। কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা বলেনি। এই টুকুইতো চৌধুরী কামরুল আহসান এইটুকুইতো চেয়েছি, ছোট এক দ্বীপ হতে বিশাল সাগরের বুকে অথবা তুমি যদি মিষ্টি করে হাসো ছোট্র এক তিল হই তোমার চিবুকে। ============================================ ২৬ তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা শহীদ কাদরী ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে মার্চপাস্ট করে চলে যাবে এবং স্যালুট করবে কেবল তোমাকে প্রিয়তমা। ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে ভায়োলিন বোঝাই করে কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা। ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো- বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো প্যারাট্রুপারদের মতো ঝরে পড়বে কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা। ভয় নেই...আমি এমন ব্যবস্থা করবো একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা! সংঘর্ষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হবে যাবে- আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক অনায়াসে বিরোধীদলের অধিনায়ক হয়ে যাবেন সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর লাল নীল সোনালি মাছি- ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, প্রিয়তমা। ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে গণচুম্বনের ভয়ে হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা। ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে, ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো স্টেটব্যাংকে গিয়ে গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান। ভয় নেই, ভয় নেই ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা। ============================================ ২৭ অর্কেস্ট্রা কামাীপ্রসাদ চট্রোপাধ্যায় ১ চাঁদকে তুমি জ্বালিয়েছ স্বপ্নে আগুন লাগিয়েছ অনেক রাত অনেক দিনে অনেক খুশির আকর্ষণে আমায় তুমি ভাবিয়েছ। ২ দিন হল নিঃশেষ রাত নিঃঝুম মন হল উন্মন প্রেম আর- আর ঘুম। -অরুন কুমার সরকার ============================================ ২৮ প্রার্থনা অরুন কুমার সরকার যদি মরে যাই ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই; যে-ফুলের নেই কোনো ফল যে-ফুলের গন্ধই সম্বল; যে-গন্ধের আয়ূ এক দিন উতরোল রাত্রিতে বিলীন; যে রাত্রি তোমারই দখলে আমার সর্বস্ব নিয়ে জ্বলে, আমার সত্তাকে করে ছাই। ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই। ============================================ ২৯ আকাশ সিরিজ নির্মলেন্দু শুণ শুধু একবার তোমাকে ছোঁব, ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন শুধু একবার তোমাকে ছোঁব, অহংকারের মুছে যাবে সকল দীনতা। শুধু একবার তোমাকে ছোঁব, স্পর্শ সুখে লেখা হবে অজস্র কবিতা। শুধু একবার তোমাকে ছোঁব, শুধু একবার পেতে চাই অমৃত আস্বাদ। শুধু একবার তোমাকে ছোঁব, অমরত্ব বন্দী হবে হাতের মুঠোয়। শুধু একবার তোমাকে ছোঁব, তারপর হবো ইতিহাস। ============================================ ৩০ চাই রমিত বন্ধ্যোপাধ্যায় আমি খুব স্বার্থপর জোনো। আমি তো চাই- তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ো এুনি। তখন তোমার নরম গলায় ঠোঁট ডুবিয়ে বলবো, ‘কেমন আছো? ============================================ ৩১ তুমি ঃ বিশ বছর আগে ও পরে -রফিক আজাদ তুমি যে-সব ভুল করতে সেগুলো খুবই মারাতœক ছিলো। তোমার কথায় ছিলো গেয়া টান, অনেকগুলো শব্দের করতে ভুল উচ্চারনঃ ‘প্রমথ চৌধুরী’ কে তুমি বলতে ‘প্রথম চৌধুরী’ ’ জনৈক উচ্চারণ করতে গিয়ে সর্বদাই ‘জৈনিক’ বলে ফেলতে । এমনি বহুতর ভয়াবহ ভুলে- ভরা ছিলো তোমার ব্যক্তিগত অভিধান। কিন্তু সে-সময়, সেই সুধুর কৈশোরে ঐ মারাত্মক ভুলগুলো তোমার বড়ো- বেশি ভালোবেসে পেলেছিলুম। তোমার পরীায় খাতায় সর্বদাই সাধু ও চলতির দুষণীয় মিশ্রণ ঘটাতে। ভাষা-ব্যবহারে তুমি বরাবরই খুব অমনোযোগী ছিলে তুমি। শোকাভিাভূত’ বলতে গিয়ে ব'লে ফেলতে শোকাভূত। তোমার উচ্চারণের ত্র“টি, বাক্য মধ্যস্থিত শব্দের ভুল ব্যবহারে আমি তখন এক ধরনের মজাই পেতুম। ২০-বছর পর আজ তোমার বক্তৃা শুনলুম। বিষয়ঃ’ নারীÑ স্বাধীনতা’! এতা সুন্দর, স্পষ্ট ও নির্ভুল উচ্চারণে তোমার বক্তব্য রাখলে যে, দেখে অবাক ও ব্যথিত হলুম। আমার বুকের মধ্যে জোঁকে-বসা একটি পাথর বিশ বছর পর নিঃশব্দে নেমে গ্যালো। ============================================ ৩২ ভালোবাসা ও দু:খ হাবীবুল্লাহ সিরাজী ভালোবাসার কোন ঠিকানা ছিল না, ভালো কি মন্দ দু:খের কোন নাম নেই। একদিন দু:খ ভালোবাসাকে খুঁজতে বেরুলো অরণ্য ও জনপদ শেষ করে সমুদ্রের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো: 'ভালোবাসার খোঁজ রাখো?' 'এই তো তোমার আসার আগেই বাতাসের সঙ্গে দক্ষিণে গেলো; দু:খো আকাশের দিকে চাইল নীল হতে হতে আগুন মুখে আকাশ বললো: 'ভালোবাসা! তার তো কোন ঠিকানা থাকতে নেই। দু:খকে কি নামে ডাকা যায় ভাবতে ভাবতে ভালোবাসা যখন দু:খের ঘরে ঢুকলো দু:খ তখন বন্ধুদের সঙ্গে তুমুল আড্ডায় মত্ত- কোন কিছু বলার আগেই ভালোবাসার গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো আর ভালোবাসার মন ডাক দিলো-'দু:খ'। সেই থেকে ভালোবাসা এবং দু:খ এক বাড়িতে উপরে-নীচে বসবাস করে। সারারাত দু:খের ঘুম হয় না-আর ভালোবাসা স্বপ্ন দেখে; নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে খসে পড়ছে স্মৃতি, পাতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে যাচেছ সোনালী মৌমাছি। সমুদ্রের গুল্মপাতা আর মাছে কোন প্রভেদ নেই- ভালোবাসা নিচে নামে। উনুনে জল ফুটছে দু:খ তখন ভালোবাসার শয্যায় নিদ্রামগ্ন ভালোবাসা অপেক্ষায় থাকে দু:খ প্রতিক্ষা, ভালোবাসা হেমন্তে বুক খুলে দিলে দু:খ উল্টে দেয় শীতের কুয়াশা, দু:খ এবং ভালোবাসা ঘৃণা ও অহংকারে যৌবন স্পর্শ করে জীবনের কাছে যায় সেখানেই তাদের ঠিকানা ও নাম। ============================================ ৩৩ বৃষ্টিতে সৃষ্টি -মুসলেহ উদ্দীন কী মোহিণী দৃষ্টি দিয়ে রমণ করলে হৃদয় আমার এক পলকের আবেশ যেন খুলে দিল মনের দুয়ার প্রথম দেখার দৃষ্টিবাণে সেইতো হলাম খুন অন্তরে মোর উঠলো জেগে ভালোবাসার ভ্র“ণ। ============================================ ৩৪ দৃষ্টি চৌধুরী কামরুল আহসান তোমার চুলের ঘ্রাণ যখন নেই আমার দু'চোখ বন্ধ হয়ে আসে। যখন ত্বকের ঘ্রাণ নেই আমি আর থাকি না আমাতে। বুকের দু’ ভাজে মুখ রাখি যখন তুমি বন্ধ কর চোখ, আমার দৃষ্টিতে হয়ে ওঠো তুমি অচিন পুরীর লোক। ============================================ ৩৫ চোখ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত কি ছিলো তোমার চোখে, ফেরাতে পারিনি চোখ বহুদিন। যেন দিগন্তে দিকে, মাথার ওপর দিয়ে কোন স্থির অচঞ্চল জলস্রোতে তাকিয়ে রয়েছো, মনে হ'তো। স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিলো সেইদিন। শেষে এলো সেই প্রতীতি রাত- দরজা বন্ধ জানালা বন্ধ, ঘন চোখ তোমার চোখের দিকে এগিয়ে যেতেই তুমি দুই ঝটকায় বের করে আমাকে দেখালে হাতে তুলে ভয়ংকর পাথরের চোখ। আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠতেই আমর চোখের কাছে এসে উপরে দেখালে আরো দুটি পাথরের চোখ। তবে কি দেখেছিলাম আমরা? একথা ভাবতে ভাবতে ভোর হ'লো আজো আছি পাশাপাশি; আমাদর কোনকিছু দেখাতে হয় না বলে তোমার চোখের দিকে চেয়ে থাকি একটানা, বুঝি, এইবাবে অগণণ মানুষ তাদের হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ফের মানুষীর বুকে। ============================================ ৩৬ মিলনটুকুই খাঁটি রফিক আজাদ মিছেই তুমি করেছা বিবাদ দিচ্ছ কঠিন আড়ি, তোমার কথার তুবড়ি তো শেষ চলো এবার বাড়ি; তোমার ত্রে“াধ তোমার দ্রোহ মলিন হবে রাতে, আমার পিঠেই নাচবে দু’হাত আনন্দে-আহাদে; কিসের বিরোধ কিসের দ্রোহ শয্যা পরিপাটি, পুরুষ-নারীর মিলনই সব মিলনটুকুই খাঁটি। ============================================ ৩৭ ভালবাসার সংজ্ঞা রফিক আজাদ ভালোবাসা মানে দু’জনের পাগলামি, পরস্পরকে হৃদয়ের কাছে টানা; ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেয়া, বিরহ-বালুতে খালিপায়ে হাঁটাহাটি; ভালোবাসা মানে একে অপরের প্রতি খুব করে ঝুঁকে থাকা; ভালোবাসা মানে ব্যাপক বৃষ্টি, বৃষ্টির একটানা ভিতরে- বাহিরে দু’জনের হেঁটে যাওয়া; ভালোবাসা মানে ঠান্ডা কফির পেয়ালা সামনে অবিরল কথা বলা; ভালোবাসা মনে শেষ-হয়ে-যাওয়া কথার পরেও মুখোমুখি বসে থাকা। ============================================ ৩৮ ভালোবাসা রফিকুজ্জামন হুমায়ুন ভালোবাসা ভালো নয় ভালেবাসায় কষ্ট বাড়ায়-নিন্দুকে কয়। আমি বলি-ভালোবকাসাকে করো না ভয় ভালোবাসা দিয়েই কষ্টকে করতে হবে জয়। প্রেম করে বিয়ে করলে জীবনভর জ্বলতে হয়-এ কথাটি সত্যি নয়। ভালোবাসার বন্ধন শক্ত হলে দাম্পত্য জীবন সুখের হয়। কেউ কেউ বলে-বিয়ে না করলে জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়; আর বিয়ে করলেই নাকি জীবন সত্যিকার অর্থে শেষ হয়ে যায়। দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথা বিশ্বাস করা ঠিক নয় ভালোবাসাকে সার্থক করতেই বিয়ে করতে হয়। ভালোবাসার কাছে সবকিছুই হয় পরাজয়। যে যাই বলুক ভাই আমার কিন্তু মন্দের মধ্যে নাই ভালোবাসার দলে মোরা ভালোবাসা নিয়েই বাঁচতে চাই। ============================================ ৪০ প্রেম শহীদ কাদরী ডব সঁংঃ ষড়াব ড়হব ধহড়ঃযবৎ ড়ৎ ফরব-ড.ঐ.অঁফবহ না, প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়- যার চোখ, মুখ, নাক ঠূকরে খাবে তালোয়ার -মাছের দঙ্গল, সুগভীর জলের জঙ্গলে সমুদ্রচারীর বাঁকা দাঁতের জন্যে যে উঠেছে বেড়ে, তাকে, হ্যাঁ, তাকে কেবল জিঙ্গেস ক'রো, সেই বলবে না, প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়, ভেঙে-আসা জাহাজের পাটাতন নয়, দারুচিনি দ্বীপ নয়, দীপ্র বাহুর সাঁতার নয়; খড়কুটো? তা-ও-নয়। ঝোড়ো রাতে পুরোনো আটচালার কিংবা প্রবল বৃষ্টিতে কোনো এক গাড়ি-বারান্দায় ছাঁট-লাগা আশ্রয়টুকুও নয়। ফুসফুসের ভেতর যদি পোকা-মাকড় গুঞ্জন করে ওঠে না, প্রেম তখন আর শুশ্র“ষাও নয়; সর্বদা, সর্বত্র পরাস্ত সে; মৃত প্রেমিকের ঠান্ডা হাত ধরে সে বুড়ো বিহবল, হাঁটু ভেঙে-পড়া কাতর মানুষ। মাথার খুলির মধ্যে যখন গাভীর গুঢ় বেদনার চোরাস্রোত হীরকের ধারকের ধারালো-ছটার মতো র'য়ে যায়, বড়ো তৎপয়হীন হ'য়ে ওঠে আমাদের উরুর উথান, উদ্যত শিশ্নের লম্ফ, স্তনের গঠন। মাঝে মাঝে মনে হয় শীত রাতে শুদু কম্বলের জন্যে, দুটো চাপাতি এবং সামন্য শব্জির জন্যে কিংবা একটু শান্তির আকাঙ্খায়, কেবল স্বস্তির জন্যে বেদনার অবসান চেয়ে তোমাকে হয়তো কিছু বর্বরেরে কাছে অনায়সে বিক্রি করে দিতে পারি-অবশ্যই পারি। কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে, এই স্বীকারোক্তির পরে মনে হলো; হয়তো বা আমি তা পারি না -হয়তো আমি তা পারবো না। ============================================ ৪০ তোমার জন্য বাসুদেব দেব এই যে এত কান্ড জানো সব কিছুই তোমার জন্য এই যে মিছিল ট্রাফিক জ্যাম বা বিধান সভায় ধন্য ধন্য সব কিছুই তোমার জন্য সেই তুমি যে লুকিয়ে রইলে দুঃখী মেয়ের চোখের পাতায় কিংবা আঁকিবুকির মধ্যে নবীন কবির চটি খাতায় এখন না হয় বাইরে এলে জানালা দিয়ে মুল বাড়িয়ে দেখো নিচে গোলাপ হাতে সেই যুবকটি ঠায় দাঁড়িয়ে। ছুটছে মানুষ অফিস ফেরৎ রণত্রে থেকে সৈন্য বালকদের ঐ প্রভাতফেরি সব কিছুরই তোমার জন্য। ============================================ ৪১ পাশাপাশি নয়, একসাথে সৈয়দ হায়দার প্রথম-প্রথম ছিলো নিমন্ত্রণ, তা থেকে এখন একটি জীবন। সেদিন যেমন রাত্রির আহারে তোমার পাশেই বসে একটি থালায় দু’জনেরই হয়ে যায় তুমি দাও তুলে ভাতে তরকারি মাখিয়ে-মাখিয়ে আমার জিহ্বায় আমি দিই তুলে একই ভাবে। তোমার-আমার জন্যে সব কিছুতো একটি হলে চলে একটি সোফায় আমাকেই কোলে করে অথবা তোমাকে আমি চশমা একটি, একটি একট্ িক'রে কাচ, এক-এক চোখে দু’জনের, বিছানায় বালিশও একটি। তোমার-আমার জন্যে দু'টো-দুটো করে কোনো জিনিসই এনো না একটিতে হয়ে যাবে টুথব্রাশ থেকে রবীন্দ্রনাথের ছবি। পাশাপাশি না থেকে দু’জন, চলো, একসাথে থাকি, একসাথে যেমন বটের ঝুড়ি বটে সারাটি জীবন। ============================================ ৪২ তারপর? পূর্ণেন্দ পত্রী তারপর? তারপর শেষ হল চৌদ্দ বছরের অজ্ঞাতবাস। সে আমাকে দেখে ডুকরে উঠল -তুমি এমন বিবর্ণ কেন? আমি তাকে দেখে চমকে উঠলাম -তুমি এমন বিদীর্ণ কেন? সে বলল -আমার হাতের দিকে তাকাও। তার হাতে ঘর-পোড়া আগুনের চাকা-চাকা ছেঁকা -আমার বুকের দিকে তাকাও তার বুকে ভাঙ্গা রাজবাড়ির সমস্ত ইট পাথর। -আমার চোখে তাকাও। তার চোখে উপুড় হয়ে আছে দুটো মরা ভ্রমর। আমি ভিজে বাতাসের মত জিজ্ঞেস করলাম -তোমাকে কাঙাল সাজাল কে? সে পাতা - ঝরার শব্দে জানাল -স্বপ্নের দরজা খুলে দিয়েছিলাম যাকে। তারপর? ্তারপর আমি তাকে সাজাতে বসলুম আমার নিজের ভিজে পালকে। ============================================ ৪৩ ফিরে যাবে তা কেন হবে হাবীবুল্লাহ সিরাজী এসে ফিরে যাবে তা কেন হবে? আমি ঘরে আছি, ঘর পর্যন্ত তোমাকে পৌছুতেই হবে ভয় নেই জেগে আছি শব্দ পেলেই দরজা খোলে দেবো সিঁড়ি ফেলে দেবো। তুমি চলে এসো নিরাপদে। এসে ফিরে যাবে তা কেন হবে? তা হয় না। কান তুলে ব'সে আছি সামান্য শব্দ পেলেই বুকের ভেতর লাফিয়ে উঠে মাছরাঙা ঘুড়ির মতো পাক খেয়ে বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় আসি-ওই তুমি এলে? কাক ডাকলে, টিকটিকি টকটক করলে রাস্তার মোড়ে জোরে হর্ণ বাজলে দমকা বাতাসে ঘরের পর্দা দাপাদাপি করলে আমি আরো শান্ত হ'তে চাই ভাবি, এখনো সময় আছে! এসে ফিরে যাবে তা কেন হবে? তুমি কি এসে সারাশব্দ না পেয়ে ফিরে গেছো? নাকি দারুণভাবে কোথাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছো কিংবা শরীর খারাপ-আসতে পারছো না, না হ'তে পারে না, এসে ফিরে যাবে তা হতে পারে না। ============================================ ৪৪ ভালোবাসলে কষ্ট বাড়ে শিকদার আবুল বাশার এক তোমার জন্যে কষ্টে আছি কষ্টে আমার সূখ কষ্টগুলো মাতাল ভীষণ গর্বে ভরায় বুক। দুই ঘরহীন ঘরে ফিরে দেখি তুমিতো নেই মনের ভিতরে ঘর বাঁধো তুমি অজান্তেই। তিন ভালোবাসা নয়তো এখন ছেলের হাতের মোয়া তোমার দীঘল কালো চুল সর্বনামের ছোঁয়া। ============================================ ৪৫ যখন যা মনে পড়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কে আগে? ডিম আগে, না মুর্গি আগে? মেঘ আগে, না জল? প্রেম আগে, না চুমুর ইচ্ছে? ফুল আগে, না ফল? ============================================ ৪৬ প্রাকৃত সুতপা সেনগুপ্ত বিবাহে বিশ্বাস নেই, জানাই প্রস্থাব এসো যেন কাঁকড়ার মতো দুইজন খোলা আকাশের নীলে উদ্যত মিলনে যে যার খোলের ছিলা খেলায় নির্জন বালি নিয়ে খেলা করে যাবো সারাদিন যদি পারো তুমি করো আরোই দুষ্কর কোনো কাজ, স্নানরোদে নাবিকেরা এলে বুঝিয়ে বাংলাদেশ সজল তুখোড় অভিমান কোরো, তবু বিবাহ প্রস্তাব কখনা না করবো না বলে করোনা আক্ষেপ এই বালিয়াড়ি জুড়ে আভুমা প্রণয় দেখো, অনশ্বর থাকবে, সমুদ্র স্বাক্ষী ============================================ ৪৭ কোন দিন বোঝনি চৌধুরী কামরুল হাসান পিছু পিছু যেকোনা আমাকে, পিছু ডাকার অধিকার নেই তোমার। সমুখে ছিলাম যখন কোনদিন বোঝনি আমাকে। খোঁজনি সঠিক পথ কিভাবে হৃদয়ের গভীরে যাওয়া যায়। সুযোগ পেলেই দেহের অলিগলিতে দিয়েছ সুড়সুড়ি, উটপাখী হয়ে মুখ গুঁজেছ বুকের ভাজে সমুখে ছিলাম যখন বলোনি কখনো তুমি, হাতটা বাড়াও। চলে গেছি যখন বহুদূর, চোখ তুলে বলোনি তবু, একটু দাঁড়াও। ============================================ ৪৮ ভালোবাসার আয়ু মহাদেব সাহা ভালোবাসি বলার আগেই ফুরিয়ে যায় আমাদের ভালোবাসার সময়, প্রেমের আগেই শুরু হয় অন্তর বিরহ- মনে হয় সবচেয়ে কম মানুষের এই ভালোবাসার সময় খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায় তার আয়ু; মানুষ মিলন চায়, কিন্তু তার বিচ্ছেদই নিয়তি। কোনো একদিন সময় করে যে বলবে ভালোবাসি বলবে যে ভালোবাসা চাই, এতোটা সময় কই ভালোবাসা বলার আগেই দেখবে ফুরিয়ে যায় ভালোবাসার সময়, শেষ হয়ে যায় তার আয়ু। ============================================ ৪৯ বিভ্রম সমুদ্র গুপ্ত চমৎকার তিল দেখে হাত দিয়ে ছুঁতে যেতেই তোমার গাল থেকে উড়ে গেল মাছি। ============================================ ৫০ ২০ (বিশ) নির্মুলেন্দু গুণ সারাদিন তবু কাটে সন্ধ্যা ঠেকে যায় ভালোবাসাহীন তবু বাঁচি ভালোবাসা পেলে মরে যাই। ============================================ ৫১ একটি চুম্বন দাও অসীম সাহা একটি চুম্বন দাও শীতার্ত রাত্রিতে আমি তোমার দরোজায় সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবো। একটি চুম্বন দাও ঝোড়া হাওয়ার মধ্যে আমি একা -একা সমুদ্রে নৌকো ভাসাবো। একটি চুম্বন দাওআমি যুদ্ধক্ষেত্রে অনায়াসে মর্টারের সামনে বুক পেতে দেব। একটি চুম্বন দাও আমি মধ্যরাত্রির কাটাতার ছিড়ে ফেলে গ্রেফতার বরণ করবো। একটি চুম্বন দাও আমি নির্দ্ধিধায় বরফশীতল ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে যাবো। ============================================ ৫২ অস্তিত্ব নাসিম আনোয়ার খড়কুটো হয়ে আমি বাতাসে কিংবা স্রোতে, শেওলার মতো ভেসে ভেসে ভেসে........... র'বো তোমার পাশে। ============================================ ৫৩ ব্যথা দাও, বুকে রাখবো রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ব্যথা দাও, বুকে রাখবো ব্যথার জন্যই তো হৃদয় আঘাতে বুক ভাঙবে না বুকে ব্যথা আছে। গলিত লাভাগুলো বেদনার যেন ঘনীভূত পাথরের দেহ আঘাতে পাথর কখনো গলে না গলে না হৃদয়। পাহাড়ে ধস নামলে কখনো মাটি অনায়াসে পেতে দেয় বুক। তুমি যাবতীয় দুঃখকে ছুঁড়ে দাও আমি বুক পেতে নেবো বুক ভাঙবে না। দুয়ার বন্ধ করলেই আমি ফিরে যাবো নির্বিকার, অস্বীকার করো মেনে নেবো। এ্যালবামে স্মৃতি নেই বলে আদৌ দুঃখ করি না, সোনালি নিঃসঙ্গতায় আমার বিচিত্র দুঃখের সমাবেশ সঞ্চয় । ব্যথা দাও, বুকে রাখবো ব্যথায় ভাঙবে না বুক বুকে ব্যথা আছে । ============================================ ৫৪ নর-নারী মুহম্মদ নূরুল হুদা সব বয়সে নারী বয়সহীনা পুরুষ মানে আর কিছু নয় তাগড়া তাজা সিনা জড়াই কিংবা গড়াই ভালোবাসা খুব কিছু নয় দুই শরীরের লড়াই; জড়াই কিংবা গড়াই ভালোবাসা তোমার আমার জীবনজোড়া বড়াই। ============================================ ৫৫ অন্য কোনো সাক্ষী নেই সামসুর রহমান সত্তার নিঝুম গোধূলির প্রলেপ নিয়ে নি:শব্দে পা রাখলাম ঘরে। তুমি একলা বসেছিলে খাটের উপর দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে। নীরবতা কোনো কোমল প্রাণীর মতো লেহন করছিলো তোমার হাত, মুখ, বুক, নাভিমূল, নিতম্ব আর পায়ের রাঙা পাতা। মনে হলো, তুমি নীরবতার লাল-ঝরানো আদর বেশ উপভোগ করছিলে আচার খাওয়ার ধরনে। আমি নিস্তব্ধতার ছল কেটে এগিয়ে গেলাম তোমার দিকে। স্পর্শ করলাম তোমাকে, যেমন কোনো সুরসাধক গভীর অনুরাগে তার বাদ্যযন্ত্রের তার স্পর্শ করেন অভীষ্ট সুর বাধাঁর জন্যে। যখন তোমাকে ছুই, মনে হয় এইবারই আমার প্রথম ছোয়া। তোমার কেলিপরায়ণ হাত তোমার হাতের কানে কানে কী এক গানের নিভৃতে কলি গুন্ গুনিয়ে যাত্রা করে স্তনের দিকে। আমার মুঠোয় ভেতর তোমার স্তন পায়রার মতো ছটফট করে নি:শ্বাস নেওয়ার জন্য। তোমার ঠোঁটে আমার ঠোঁটে, কখনো আমার জিভে তোমার মুখের ভেতরে মাছ হয়, কখনো তোমার জিভ আমার মুখের গহ্বরে অন্ধপাখির মতো ডানা ঝাপটায় এবং আমার ভারোবাসা সন্তের মাত প্রজ্জবলনের বলব ভেদ করে তোমার অস্তিত্বের গভীরতম প্রদেশে নবীন অতিথী। সেই মূহুর্তে তোমার শরীরে ফোটে প্রথম কদম ফুল, জ্বলজ্বল করে হাজার তারা; সেই মুহুর্তে তোমার শরীরে জ্যোৎস্নধোয়া আরণ্যক শোভা। তোমার শরীর তখন বরফ-গলা নদী। কী করে দেখাবো অন্য কাউকে এই অনুপম দৃশ্য? কাকে বিশ্বাস করাবো এ-কথা? দূরের আকাশ, চার দেয়াল, শয্যার বিস্রস্ত চাদর, বুক শেলফ্ এবং টিভি সেট ছাড়া অন্য কোন সাক্ষী নেই এই গহন সৌন্দর্যের। ============================================ ৫৬ উপহার মহাদেব সাহা এতো ফুল কোথায় রাখি, নাই সে ফুলদানি ছোট্র ফ্রিজে ধরে না কেক, আপেল অভিমানী! কোথায় আমি রাখবো এতো ভালোবাসার মালা তোমার দানে ভরে গেছে আমার শূণ্য থালা; ============================================ ৫৭ কঠিন কাজ আজিজ মিশ্র কি কি পারো তুমি? সেই নারী জানতে চাইলো: গান গাইতে পারো? আমি বললুম না ছবি আঁকো? আমি বললুম না একটু চুপ থেকে সে আবার জিজ্ঞেস করল অভিনয় করো? লড়তে জানো? মাটি কোপাতে ফুল ফোটাতে? আমি বললুম না না না.... সেই অপরূপা নারিকেল গাছের ছায়ায় দাড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলের গোলাপী আলোয় অবাক সুরে বললো তুমি তাহলে কি পারো? আমি বললুম,আমার কোন যোগ্যতাই নেই আমি শুধু ভালবাসতে পারি হায় তখন কি জানতাম ভালোবাসাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। ============================================ ৫৮ কৃপনা মুসলেহ উদ্দিন সবটুকু দেবে বলে দিলে এক কনা প্রেমও আংশিক হয় ছিলোনাতো জানা। আমি তো দিয়েছি তুলে সবটুকু মোর বেঁচে থাকার সাধটুকু রেখে বড়জোর অনায়াসে পেয়ে তুমি হৃদয় আমার অকিঞ্চিতকর অনুদান দিলে প্রতিদানে তার। ============================================ ৫৯ তুমি যদি চৌধুরী কামরুল আহসান তুমি যদি রাধাচূড়া হও আমি মাটি হবো, ভালোবাসার শেকড় আমার বুকে ছড়িয়ে দেবে তুমি, তোমাকে ধারন করে আজীবন। আমার নির্যাস নিয়ে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে তোমার দেহ, কখনো এক কোকিল এসে বসবে তোমার ডালে, আমি তাকিয়ে থাকবো অপলক তুমি না হয় নাই তাকালে! ============================================ ৬০ প্রথম প্রেমিকা বিজয় মাখাল যে আজ আঙুল নামিয়েছে জলে, জেনো, সে আমার প্রথম প্রেমিকা। আমি ওর স্বপ্নে ও অশ্রুর মধ্যে শুয়ে থাকি নি:শব্দ ঝিনুক হয়ে চিরদিন-চিরদিন আমি তার অবৈধ খেলার সাথী; গোপন সুখ তার একে একে আমিই ভেঙেছি। ও বালিকা তবুও কিছুই বোঝেনি। যে আজ আমার আঙুল নামিয়েছে জলে, এত ভোরে, অকারনে তার চারপাশে ইতিউতি ঘুরে গেছে শিমুলের ফুল ও বালিকা তবু কিছুই বোঝেনি। শুধু কখন সে চুপিসারে শিমুলের আবডালে পাখিদের ভালোবাসাবাসি একা দেখে গেছে আমাকে বলেনি! ============================================ ৬১ জলাশয় বাপ্পী রহমান বাসনার তেপান্তর পেরিয়ে তুমি মেঘ রঙ শাড়ি পরে এসেছিলে শীত পাখি হয়ে হৃদয়ের জলাশয়ে। তোমার ডানার ঝাপটায় হৃদয়ের জলাশয় তোলপাড় করেছিলো সেদিনের মিষ্টি ছোঁয়ার দুষ্টামি! হায়! কেন বুঝেনি- এ হতভাগা হৃদয়। ============================================ ৬২ আজ ভালো থাকো সুরজিৎ ঘোষ তোমার সঙ্গে এত বেশি মেলামেশা উচিত হয়নি, আর আমি আসব না। শুধু, আজ তুমি সারাদিন ভালো থেকো যেন তোমার ঐ সন্ধ্যাবেলার জ্বর আজকে না আসে, তোমার গলার স্বর একেবারে নিভে যাওয়ার কদিন আগে আমাকে ডাকলে, যে ভাবেই হোক সেদিন আসব আবার আজ ভাল থাকো, তোমার জন্মদিনে এর বেশি আর কি আছে আমার চাওয়ার। ============================================ ৬৩ শুধু দু'জনা চৌধুরী কামরুল আহসান তোমার দু'চোখ রাখো আমার চোখেতে দেহের ভাঁজেতে পড়ুক ভাঁজ, বেহায়া চাঁদ ওর মুখটা লুকাক বন্দরে ভিরুক জাহাজ। ============================================ ৬৪ প্রেমের কবিতা মহাদেব সাহা ভালোবাসি তাই ফুল ফোটে ভোর হয় ওই চাঁদ ওঠে, ভালোবাসি তাই মেঘ করে পৃথিবীতে এই আলো ঝরে; নদী বয় আর পাখি গায় দুই চোখ জলে ভরে যায়, আকাশকে মাটি কাছে ডাকে গানে গানে মন ভরে থাকে; ভালোবাসি তাই মেঘ নামে যুদ্ধ থামে ভিয়েতনামে ভালোবাসি তাই চাঁধ ওঠে দুই চোখে এত তারা ফোটে; ভালোবাসি তাই ভোর হয় ভরে উঠে নদী-জলাশয়, ভালোবাসি তাই ফুল ফোটে ভোর হয় তাই চাঁদ উঠে। ============================================ ৬৫ তোমার বসন্ত কৃষ্ণ ধর বসন্তে ফুটায় ফুল, কথা দিচ্ছি এই ফুল তুলে তোমাকে একগুচ্ছ দেবো চুলে। দিয়ো। কিন্তু বিহ্বলতা এনো না কখনো চোখে তার চেয়ে স্বপ্ন দেখো, কে জাগাল চৈত্রদিনে কে জাগাল আকস্মিকতায়। আমি কি বসন্ত হ'বো তোমার বসন্ত স্পর্ধা নিয়ে দোলাবো কি তোমার যৌবন নতুন বৃষ্টির মতো ধানচারা তোমার শরীর আমাকে জড়াতে চায়, আমি কিন্তু বিপন্নের মত তখন লুকোবো মুখ দু:খিত হয়ো অরুন্ধতী। তোমার বক্ষের স্বর্গ করতলে দিয়েছে উত্তাপ, চাই না, চাই না আমি, ওই দুটি বিস্মিত আপেল কেনো চিত্রশিল্পীকে দিয়ো অনাবৃত উপহার সে আঁকবে আশ্চর্য তুলিতে আমি হ'বো বিমগ্ধ দর্শক। ============================================ ৬৬ দেখা হবে প্রমোদ বসু দেখা হবে অন্যমনষ্কতায়! যদি তাহ রাখো যদি বলো বাড়ির কাহিণী যদি লজ্জাবনত মুখে ফোটে অতীতের ধ্বনি, যদি সন্ধ্যামনি গন্ধ দেয় চুলে, দেখা হবে ভূল পথে, হাতে-হাত, আঙুলে-আঙুলে! যেতে যেতে বৃষ্টি হবে ফুলহীন গাছের ভঙ্গীতে, শব্দ খুঁজে নেবে ছবি-শব্দের সঙ্গীকে; কেবল দু'জন শুধু আরো দূর অন্যমনস্কতায় চলে যাবে। দেখা হবে স্মৃতি ও সত্তায় । কিংবা ভূল, এইসব মিথ্যেই ভেবে দেখা। আসলে সারাদিন ক্ষণভঙ্গুর, একা- কেউ এসে ডাক দেবে, কেউ চলে যাবে ভুলে, দেখা হবে একদিন হাতে-হাত, আঙুলে-আঙুলে। ============================================ ৬৭ শুধু তোমারই জন্যে রথীন ভৌমিক আমি শীতের কাছে প্রার্থনা করি সারারাত সারাদিনমান কেবল তোমারই জন্যে কেবল তোমারই জন্যে এই প্রিয় অরন্যের কাছে এই প্রিয় সমুদ্রের কাছে এই অবেলায় এত নির্জনতা তোমার পায়ের শব্দে ঘর ভিজে যায় কোথায় দাঁড়াবো তবু আমি জিজ্ঞেস করো না কখনো কেন আসি। ============================================ ৬৮ তুমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তুমি যে তুমিই, ওগো সেই তব ঋণ আমি মোর প্রেম দিয়ে শুধি চিরদিন। ============================================ ৬৯ ভুলো না রাম বসু তোমার পাশে দাড়িয়ে ভাঙ্গা পৃথিবী সাজাবো স্বপ্ন ছিল, সাগরে ধোবো মনের আঙিনা তারার ঘুম ঘুচিয়ে সেতার শোনাবো ধানের বানে আকাশ ভাঙা বিরাট চেতনা হৃদয় ধরে খোকার চোখে চুমায় হারাবো। স্বপ্ন ছিল সাগরে ধোবো মনের আঙিনা হায় রে মন ত্রাসের ভাঙা উজাড় আকালে হিজল ডিঙ্গা কোথায় গোলো? কোথাও দেখি না ঘূণিঘোর শঙখচুঢ় পাড়ের কপালে ছোবল মারে, বলরে মন কোথায় আঙিনা? হায়রে মন ত্রাসের ভাঙা উজাড় আকালে তোমাকে আমি ভুলিনি তুমি আমাকে ভুলো না পৃথিবী প্রাণ ইদম, বাজ

রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭

আমার ইচ্ছা

আমি একজন মুসলিম আমার ধর্ম ইসলাম।মুসলমান হিসেবে আমার কর্তব্য হলো পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সুন্নত তরীকায় চলা নিজেকে সর্বদা পবিত্র রাখার চেষ্টা করা। আর সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালার বিধানকে প্রাধান্য দেয়া।মানুষের সেবা করে আমার কর্তব্য । আমি নিজেকে একজন পাক্কা মুসলমান বানাতে চাই।আল্লাহ তায়ালা আমাকে কবুল করুন।আমিন